===

২০১০ সালের সেরা প্রযুক্তি

প্রযুক্তির জন্য ২০১০ সাল ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কিছু প্রযুক্তি সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সূচনা করেছে, কিছু প্রযুক্তি সামগ্রিক জীবনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করেছে এবং কিছু প্রযুক্তি এসেছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। আর এসব প্রযুক্তি নতুন অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ করেছে নিঃসন্দেহে। ২০১০ সালের সেইসব উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তি টেকনোলজি টুডে’র বিশেষ আয়োজন। আসুন সেই প্রযুক্তিসমূহ সম্পর্কে পরিচিত হইঃ
কম্পিউটিং ডিভাইস
এ বছরই দ্রুতগতি সম্পন্ন কম্পিউটার প্রসেসর এসেছে। এছাড়া স্টোরেজ ডিভাইস বা হার্ডডিস্কের ধারণক্ষমতা কয়েকগুণ বেড়েছে। তবে এসব ডিভাইসের মান উন্নয়ন হলেও সেই সঙ্গে এর মূল্য বা দাম বাড়েনি।

কম্পিউটিং প্রযুক্তির মান উন্নয়নে ইন্টেল শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে। যেমন, প্রসেসরে ইন্টেল কোর আই৭ এ রয়েছে মাল্টিকোর টেকনোলজি যা অধিক গতি সম্পন্ন। এই প্রযুক্তি পিসির দক্ষতাকে অনেকগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। মাল্টি টাস্কিং এপ্লিকেশনে এই প্রযুক্তি গতির সঞ্চার করেছে। রিয়েলস্টিক গেমিং এর ক্ষেত্রে এর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অতুলনীয়। তাছাড়া এর ভিডিও রেজুলেশন অত্যন্ত উন্নত।
হার্ডডিস্কের ধারণক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে র‌্যামের ধারণক্ষমতাও বেড়েছে। ইউএসবি ডিভাইস প্রযুক্তিতে পরিবর্তন এসেছে। যেমন ইউএসবি ৩.০। এটি ইউএসবি ২.০ অপেক্ষা ১০ গুণ দ্রুতগতি সম্পন্ন। এটি পরবর্তী প্রজন্মের সুপার স্পিড ইউএসবি। এর ট্রান্সফার গতি ৪.৮ গিগাবাইট পর্যন্ত। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ডিভাসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ট্যাবলেট পিসি
২০১০ সালের একটি জনপ্রিয় প্রযুক্তি ট্যাবলেট পিসি। এটি এক ধরনের কম্পিউটার যা ল্যাপটপ এবং স্মার্টফোনের মাঝামাঝি একটি প্রযুক্তি। প্রথমে ট্যাবলেট কম্পিউটারের ধারনা আনে অ্যাপলের আইপড। অ্যাপলের আইপডের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এসেছে স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি। এই ধরনের পিসি ওয়েব নির্ভর যেমন ডিজিটাল বইয়ের জন্য ই-রিডার, নিউজ পেপার ও ডিজিটাল ম্যাগাজিন পড়া যাবে।

স্মার্টফোন
২০১০ সালের একটি আরেকটি জনপ্রিয় প্রযুক্তি স্মার্টফোন। বর্তমানে প্রযুক্তি জগতে স্মার্টফোনের আধিপত্য উল্লেখ করার মতো। শক্তি ও স্টোরেজ বা ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোন ডেস্কটপ পিসির আরো কাছাকাছি চলে এসেছে। এখন ব্যবহারকারী মোবাইল ফোনে অধিক কম্পিউটিং সুবিধা পাচ্ছে। মোবাইল ফোনে রয়েছে জিপিএস চিপের সমন্বয়। এতে টুইটার, ফেসবুক ও অন্যান্য, গুগল এবং বিং হতে রিয়েল টাইম ডেটা স্ট্রিম লাইসেন্স করার পর রিয়েল টাইম সার্চ কার্যকর হয়। তাছাড়া স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেমে যথেষ্ট উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এ বছর বিশ্বে ব্ল্যাকবেরি স্মার্টফোন হিসেবে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। অ্যানড্রয়েড ফোন একটি জনপ্রিয় স্মার্টফোন। সার্চ ইঞ্জিন প্রতিষ্ঠান গুগল এই অ্যানড্রয়েড ফোন বাজারে এনেছে। এই স্মার্টফোন বহনযোগ্য ওয়েব টিভি হিসেবে কাজ করে। মাল্টিমিডিয়া সহ কম্পিউটিং এ স্মার্টফোন সমূহ ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর বিস্তৃতি ঘটেছে
যদিও অনেক আগে থেকে ক্লাউড নির্ভর কম্পিউটিং এর একটা ধারনা এসেছে তথাপি বলা যায়, ২০১০ সালে ক্লাউড কম্পিউটিং এর বিস্তৃত ঘটেছে অনেকাংশেই। বছরের শুরুর দিক থেকে বিশ্বের বড় বড় আইটি প্রতিষ্ঠানে ক্লাউড কম্পিউটিং নিয়ে তাদের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে থাকে। এক সমীক্ষায় লক্ষ্য করা গেছে, যে কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের আইটি বাজেটে প্রায় ১৮ শতাংশ ব্যয় কমিয়ে আনতে পারে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে। তাছাড়া ডেটা সেন্টারসমূহ তাদের ব্যয়ের ১৬ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয় এই প্রযুক্তির প্রসারে। কাজেই ক্লাউড কম্পিউটিং এর যথেষ্ট সুবিধা রয়েছে। এই প্রযু্‌ক্তিতে স্টোরেজ, মেমরি, প্রসেসিং এবং ব্যান্ডউইথ কেন্দ্রীয়করণ দ্বারা অনেক বেশি কার্যক্ষমতা সম্পন্ন। এতে চাহিদা মোতাবেক সফট্‌ওয়্যার, রিসোর্স ও তথ্যসমূহ শেয়ার বা বিনিময় করা যায়।

ইন্টারনেট নির্ভর কম্পিউটিং হচ্ছে ক্লাউড কম্পিউটিং। ইন্টারনেট ভিত্তিক এপ্লিকেশন দ্বারা যে কোনো একটি কম্পিউটার হতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে এপ্লিকেশনসমূহ ইনস্টলেশন ছাড়া নিজস্ব ফাইলগুলো এক্সেস করা যায় অনায়াসে। এতে ওয়েবে সকল ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যবহারকারীকে ক্লায়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। সামপ্রতিক বছরগুলোতে ক্লাউড কম্পিউটিং এর ভিত্তি অত্যন্ত জোরালো হয়। এ বছরেই ক্লাউড কম্পিউটিং এর চাহিদা ক্রমশঃ বেড়ে চলেছে।
সফট্‌ওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট্‌ উল্লেখযোগ্যভাবে ক্লাউড কম্পিউটিং এর দিকে মনোযোগ দিয়েছে। মাইক্রোসফট্‌ মূলত কম্পিউটার সফট্‌ওয়্যার থেকে অধিক উপার্জন করে থাকে। ইন্টারনেটের ব্যবহার দ্রুত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানসমূহ এই ধরনের সফট্‌ওয়্যার ও সার্ভিসের দিকে অধিক হারে নজর দিচ্ছেন। যেমন জনপ্রিয় প্রোগ্রাম ওয়ার্ড, পাওয়ার পয়েন্ট প্রভৃতির অনলাইন সংস্করণ তৈরি হয়েছে। মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ফোন সেভেন প্লাটফর্ম ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের উপর ভিত্তি উন্নয়ন করা হয়েছে।
সামাজিক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হয়েছে
২০১০ সালে সামাজিক নেটওয়ার্কিং এ ফেসবুক ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে। অবশ্য, এ বছরই ফেসবুকের পরে সামাজিক নেটওয়ার্কিং এ টুইটারও বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এ বছরই জনপ্রিয় সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইট ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ হলিউড সিনেমায় চলে এসেছে এবং এ বছরের শেষের দিকে টাইমস ম্যাগাজিন মার্ক জুকারবার্গকে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ অর্থাৎ বছরের সেরা ব্যক্তি নির্বাচিত করে। বলা যায়, সামাজিক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হয়েছে ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সামাজিক ওয়েব সাইটের মাধ্যমে।

এইচটিএমএল৫
২০১০ সালের এইচটিএমএল এর সর্বশেষ সংস্করণ এইচটিএমএল৫। এটি একটি সমৃদ্ধ ইন্টারনেট এপ্লিকেশন প্রযুক্তি যেমন এডোবি ফ্লাশ, মাইক্রোসফট্ সিলভারলাইট এবং সান জাভাএক্স এর প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করেছে। এতে রয়েছে ভিডিও, এনিমেশন ও অন্যান্য সমৃদ্ধ এপ্লিকেশন প্লাগ ইন সুবিধা।

ইলেকট্রনিক পেপার রিডার
২০১০ সালে এসেছে ইলেকট্রনিক পেপার রিডার। এই ইলেকট্রনিক রিডারে রয়েছে টাচ স্ক্রিন সুবিধা। এতে ট্রুয়েস্ট সেন্স এবং ওয়াইফাই প্রযুক্তির সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়। পাবলিকেশন বা প্রকাশনায় এক নতুন দিগন্তের সন্ধান এনে দিয়েছে। এটি ই-রিডিং ডিসপ্লে হিসেবে কাজ করছে। এতে ডিজিটাল নিউজপেপার ও ম্যাগাজিন পড়া যায়। এতে রয়েছে পাতলা স্ক্রিন এবং উচ্চমান সম্পন্ন রেজুলেশন যা স্পর্শ করা মাত্র নির্দিষ্ট বিষয় দেখা যায় দৃষ্টিনন্দন স্ক্রিনে।

লিথিয়াম আয়োন ব্যাটারি
সেলফোন, ল্যাপটপ কম্পিউটার এবং বিভিন্ন পাওয়ার টুলে লিথিয়াম আয়োন ব্যাটারি প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ব্যাটারি সমূহ ক্ষুদ্রাকৃতির এবং হালকা। এতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১০ সালের একটি উল্লেখ করার মতো প্রযুক্তি এটি। এতে ওভারচার্জিং, শর্ট সার্কিট এবং অতিরিক্ত হিট ক্ষতির সম্মুখীন হয় না। এ ধরনের ব্যাটারি অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী।


২০১০ সালে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা মনে রাখার মতো। ডেস্কটপ কম্পিউটারের চাহিদা কমে আসছে। এর পরিবর্তে নোটবুক, ল্যাপটপ এবং স্মার্টফোনে কম্পিউটিং জনপ্রিয় হয়েছে। ইতিমধ্যে ওয়েবে ক্লাউড নির্ভর কম্পিউটিং চালু হয়েছে। আগামী দিনে ক্লাউড কম্পিউটিং এর ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটতে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানসমূহ এ ব্যাপারে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url