===

ছুলি রোগঃ কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার।ডাঃ মোঃ মুরাদ হোসেন

 ছুলি রোগঃ কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার।ডাঃ মোঃ মুরাদ হোসেন

ছুলি কি?

ছুলি ফাঙ্গাস বা ছত্রাক জনিত ত্বকের একটি রোগ।স্থানীয় ভাবে এটি “ছউদ/ছইদ/ছলম/কদম” নামেও পরিচিত।মেডিকেলীও ভাষায় একে Tinea Versicilor/Pityriasis versicolor বলা হয়।এটি Malassezia Furfur নামক একপ্রকার ঈস্ট দ্বারা হয়ে থাকে।

ছুলি কোথায় হয়ঃ

শরীরের বুক,পিঠ,গলা,হাত ও অন্যান্য উন্মুক্ত অংশে বেশি দেখা যায়।তবে কোন কোন সময় বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে মুখেও দেখা দিতে পারে।

ছুলি রোগের লক্ষণঃ

আক্রান্ত স্থানে সাদা বা বাদামি গাঢ় বা হালকা ছোট ছোট ছোপ ছোপ  দাগের মতো দেখা দেয়।সাধারণত ফর্সা ত্বকে গাঢ় (গোলাপী/খয়েরী), শ্যামলা ত্বকে হালকা রঙের হয়।অনেকগুলি ছোপ ছোপ দাগ একসাথে হয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করতে পারে।গরম বাড়লে চুলকানো বা জ্বালাপোড়া বেড়ে যেতে পারে।সংক্রমণ অনেক বেশী হলে চামড়া উঠতে পারে।তবে শীতকালে ছুলি অনেকটাই কমে যায়। 

ছুলি রোগের কারণঃ

১) গরম,,আর্দ্র ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া।

২) প্রচুর ঘাম হওয়া।

৩) তৈলাক্ত ত্বক।

৪) দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করলে।

৫) এন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ অনেকদিন যাবত সেবন করলে।

৬) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে।

৭) অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।

৮) সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে বা তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র শেয়ার করলে।

৯)যেখানে অধিক লোক বসবাস করে,যেমনঃ জেলখানা, হোস্টেল,ব্যারাক,মাদ্রাসা ইত্যাদি।

১০) গ্রীষ্ম ও বর্ষাকেলে বেশী হয়।

ছুলি প্রতিরোধে করনীয়ঃ

১) গরমকালে ঢিলেঢালা, পাতলা ও সুতি পোশাক পরিধান করা।

২) শরীরের যেসব স্থানে ঘাম বেশি হয়,সেসব স্থান বারবার ধুয়ে পরিষ্কার ও শুকনো রাখা।গরমের দিনে রোজ একবার বা দুবার গোসল করা।

৩) গোসলের পর গা ভালো করে শুকিয়ে নেওয়া।

৪) ঘর্মাক্ত অবস্থায় বেশিক্ষণ না থাকা। ঘামে ভেজা পোশাক তাড়াতাড়ি পাল্টে ফেলা।না ধুয়ে আর ব্যবহার না করা।

৫) রোদে গেলে ছাতা ও সানব্লক ব্যবহার করা।

৬)  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।

৭) দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিক বা স্টেরয়েড সেবন পরিহার করা।

৮) পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।

৯) প্রচুর পানি পান করা।

১০) অন্যের ব্যবহৃত তোয়ালে,গামছা,গামছা ইত্যাদি ব্যবহার না করা।

১১) একই ক্ষুরে একাধিক ব্যক্তি মাথা বা দাঁড়ি না কামানো ।

১২) স্যাঁতসেঁতে আর্দ্র আবহাওয়ায় যথেষ্ট  পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা।

১৩) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ছুলি থেকে মুক্তির মহৌষধ।

ছুলি রোগ নির্ণয়ঃ

সাধারণত আক্রান্ত জায়গা দেখেই রোগ নির্ণয় করা যায়।তবে ক্ষেত্র বিশেষে ত্বকের ফাংগাস পরীক্ষা করতে হতে পারে।

ছুলি রোগের চিকিৎসাঃ

যথেষ্ট সাবধানতার পরেও যদি ছুলি রোগে আক্রান্ত হন,তবে চিন্তার কিছু নেই।সঠিক চিকিৎসায় ছুলি নিরাময় হয়। তাই অভিজ্ঞ একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং সে অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন।ধরন অনুযায়ী ছুলির চিকিৎসায় সাধারণত নিম্ন লিখিত ওষুধ ব্যবহৃত হয়ঃ

১) ২% কিটোকোনাজল  অথাবা সেলেনিয়াম সালফাইড যুক্ত সাবান বা শ্যাম্পু।

২) মুখে খাওয়ার ছত্রাকনাশক ওষুধ।

৩) লক্ষণ অনুযায়ী অন্যান্য ওষুধ।

@ ডা.মোঃ মুরাদ হোসেন

ডার্মাটোলজিস্ট ও এস্থেটিক সার্জন

কনসাল্টেন্ট, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ,

কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, উত্তরা,ঢাকা-১২৩০।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url