হাত বা পা মচকে গেলে করনীয় কি জেনে নিন | Find out what to do if your arm or leg is sprained
অস্তসন্ধিতে আঘাতের ফলে সন্ধিকে অবলম্বন দানকারী লিগামেন্ট সৃষ্টি হয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা টান কিংবা লিগামেন্ট ছিঁড়ে যেতে পারে। এমন অবস্থাকে সাধারণভাবে মচকানো নামে অভিহুত করা হয়।বেস বল, ফুটবল, বােলিং, স্কেইটবােডিং, টেনিস প্রভৃতি খেলায় মচকানোর ঘটনা বেশি ঘটে।
মচকানাের স্থান
মচকানাের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে গােড়ালিতে। দ্রুত ঘােরাতে বা মােচরাতে গেলে গােড়ালির বাইরের ও পাশের অংশের লিগামেন্ট ছিড়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয় । খেলােয়াড়দের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মচকায় গােড়ালি । সামান্য মচকানাে সাড়িয়ে তােলা গেলেও গুরুতর মচকানাের কারণে অনেকের খেলােয়ারি জীবন অকালে শেষ হয়ে যায়। হাঁটুর ৪টি লিগামেন্ট কজাসন্ধির মতাে কাজ করে।
এগুলাে সামনে-পেছনে-দুপাশে বিন্যস্ত হয়ে হাঁটুকে সচল ও সক্রিয় রাখে। কিন্তু হাঁটুর সামনের দিকে অবস্থিত লিগামেন্ট (anterior cruciate ligament, ACL) সম্পূর্ণ ছিড়ে গেলে সবচেয়ে ক্ষতিকর মচকানাে ঘটে। গাড়ি দুর্ঘটনায় ঘাড় মচকানাে রােগীর সংখ্যা বেশি থাকে। গাড়ি হঠাৎ থমকে যাওয়াতে মাথার প্রচন্ড ঝাঁকুনির ফলে এ মচকানাের সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে গ্রীবা কশেরুকাগুলাের ক্ষতি হয় না; বরং যে সব লিগামেন্ট কশেরুকাগুলাে যথাস্থানে রাখতে সাহায্য করে সেগুলাের ক্ষতি হয়।
এর ফলে সাধারণত প্রচন্ড ব্যথা ও ঘাড় ফুলে যাওয়ার মতাে অবস্থা হয়, কিন্তু কখনও কখনও ঘাড় বেশি বেঁকে গেলে সুষুম্না কান্ড (স্পাইনাল কর্ড) মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। কজ্বি মচকে যাওয়ার ঘটনাও কম নয়। বেস বল, ফুটবল, বােলিং, স্কেইটবােডিং, টেনিস প্রভৃতি খেলায় কব্জি মচকানাে সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ বিপরীতমুখি উল্টে গেলে বৃদ্ধাঙ্গুলসহ যে কোনাে আঙ্গুল মচকে যেতে
পারে।
মচকানাের লক্ষণঃ
মচকানাের প্রথম লক্ষণ হচ্ছে ব্যথা। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাথা অনুভবের বিষয়টি দেরিতেও হতে পারে। যেমন- কোনাে ব্যক্তি যদি ঘরের ভেতর রংয়ের কাজ করে এবং দিনের পর দিন হাতের উঠা-নামা চলে তাহলে অনেকদিন পর সে মচকানাের বিষয় টের পাবে। এর কারণ হচ্ছে প্রদাহ, ফুলে যাওয়া ও পেশি আক্ষেপ দেখা দিতে সময় লাগতে পারে।
শরীরে ব্যথা হলেই ধরে নিতে হবে কোথাও গন্ডগােল হয়েছে। অর্থাৎ মস্তিষ্কে খবর পৌছে যায় কোন অস্থিসন্ধিতে ব্যাঘাত ঘটেছে এবং তার নিরাময় দরকার। কাজ, ব্যায়াম, খেলাধুলা শেষে ব্যথা সৃষ্টির বিষয়টি নজরে আসে।
সন্ধিতে আঘাত পাওয়ার কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে জায়গাটি ফুলে যায় । লিগামেন্ট তন্তু ছিড়ে গেলে রক্তপাত হয়।
কিছু সময় পর চামড়ার উপরে কালশিরা পড়ে। মচকানাের জায়গায় ব্যথা ও ফুলে উঠার সঙ্গে সঙ্গে জায়গা ঘিরে পেশিআক্ষেপের সৃষ্টি হয়, ফলে পেশি শক্ত হয়ে যায়। ব্যথা, ফোলা ও পেশি-আক্ষেপ মিলে হাঁটা-চলাই দায় হয়ে পড়ে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হয় ।
প্রাথমিক চিকিৎসাঃ
চিকিৎসা নির্ভর করে মচকানাের ধরণ ও ব্যাপকতার উপর। চিকিৎসকের পরামর্শে নন-স্টেরয়ডাল (nonsteroidal) ওষুধ খাওয়া যেতে পারে ব্যথা কমানাের জন্যে। ভারী কিছু বহন করার ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে। তবে
প্রথমেই যা করতে হবে তা হচ্ছে মচকানাে গুরুতর হলে দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে প্রাথমিক চিকিৎসা ও বিশ্রাম নিতে হবে।
গুরুতর মচকানাের ক্ষেত্রে বিশ্রাম নিতেই হবে এবং চারটি কাজ গুরুত্ব সহকারে করতে হবে।
এ ৪টি কাজের ইংরেজী
শব্দের প্রথম অক্ষর দিয়ে RICE নাম দিয়ে প্রচলিত আছে;
বিশ্রাম (Rest) + বরফ (Ice) + ক্ষত পরিষ্কার
(Compression) + উচ্চতায় রাখা (Elevation) = RICE
১.বিশ্রাম : মচকানাে রােগীকে বিশ্রামে রাখতে হবে। কোনাে অতিরিক্ত চাপ দেওয়া যাবে না। গােড়ালি মচকানাে খুব সাবধানে হাঁটতে হবে।
২.বরফ : মচকানাের সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা ও ফোলা সীমিত রাখতে আক্রান্ত স্থানে বরফ দিতে হবে। এক নাগারে দিনে ৩-৪
বার ১০-১৫ মিনিট করে বরফ লাগাতে হবে; এর বেশি সময় দিলে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে ।
ক্ষত পরিষ্কার : ক্ষত পরিষ্কার করে নতুন ব্যান্ডেজ এমনভাবে লাগিয়ে দিতে হবে যেন সন্ধিটি অনড় ও সঠিক
অবলম্বনে থাকে। এ কাজটি অভিজ্ঞ নার্স দিয়ে করানাে ভাল।
৩.উচ্চতায় রাখা : মচকানাে সন্ধিটি দেহের বাকি অংশের চেয়ে সামান্য উঁচুতে তুলে রাখতে হবে। এতে ফোলা কমে যাবে।