Kichir Michir | কিচির মিচির | Apurba | Keya Payel | Shelly | Toufiqul Islam | Bangla Eid Natok 2022
Jannat
30 Aug, 2022
আমাদের বিয়ের পর মীরা একটা আলমারি কিনেছিলো খুবই সস্তায়। পরে আমরা জানতে পেরেছিলাম, আলমারিটা অন্যরকম। সেটার ভেতর থেকে অদ্ভুত শব্দ আসতো রাতের বেলায়।
অথচ আলমারিটা দেখতে একদম সাধারন। আমাদের বিয়ের পর, টানাটানির সংসার, তা থেকেই একটু আধটু বাঁচিয়ে দু-একটা ফার্নিচার কেনার স্বপ্ন দেখছিলাম আমরা। সত্যি বলতে, তখন আমাদের ঘরে একটা চেয়ারও ছিলো না। পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম আমরা, পরিবার থেকে মেনে নেয়নি। একটা ছোটখাটো চাকরি ছিলো আমার, মীরা কিন্ডারগার্টেনের চাকরিটা নিলো, ওর আর আমার আয় মিলিয়েই চালাচ্ছিলাম সংসারটুকু। একটু একটু টাকা জমাচ্ছিলাম, ছোট ছোট স্বপ্নগুলো সত্যি করবার জন্য।
তখনই একদিন আলমারিটার খোঁজ পেলাম। সেকেন্ড হ্যান্ড আলমারি, দামে ভারি সস্তা। মীরা আর আমার জমানো টাকা দিয়েই কিনে ফেললাম আলমারিটা। আমাদের সংসারের প্রথম আসবাব।
সেদিন রাতেই, আমাদের ঘুম ভাঙলো কারো চিৎকারে।
মীরা ভীষণ ভয় পেয়েছিলো। আমিও পেয়েছিলাম, তবে সেটা প্রকাশ করলাম না। মীরাকে সাহস দিয়ে বললাম, 'এমন কতো শব্দই তো পাওয়া যায় রাতের বেলা।'
মীরা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, 'কিন্তু, এতো জোরে হলো শব্দটা। ঠিক যেন ঘরের মাঝে।'
'হু। রাতে অল্প একটু শব্দও অনেক দূর থেকে শোনা যায়।'
মীরা একটু যেন অভয় পেল, ঘুমিয়ে পড়লো শেষে। আমারও ঘুমে লেগে এলো চোখটা।
কিন্তু, বেশিক্ষণ ঘুমাতে পারলাম না। ধুপধাপ শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমরা দুজনে উঠে পড়লাম একসাথে। কোথা থেকে শব্দটা আসছে, প্রথমে বুঝতে পারিনি। যখন বুঝলাম, দু'জনেরই ভয়ে শুকিয়ে গেল গলা।
বন্ধ আলমারির ভেতর থেকে আসছে শব্দটা।
আমি কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে আলমারিটা খুলতে উঠলাম, ভেতরে কি আছে দেখার জন্য। মীরা আমায় আঁকড়ে ধরলো, 'না, তোমাকে যেতে দিবো না ওদিকে।'
আলমারির ভেতর থেকে শব্দটা বাড়ছেই। কে যেন প্রবল আক্রোশে আলমারি ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
তারপর, হঠাৎ থেমে গেল শব্দটা। রাতের নির্জনতা গ্রাস করলো আমাদের দুজনকে।
সে রাতে, আমাদের দুজনের চোখে এক ফোঁটা ঘুম আসলো না। ভয়ে।
পরদিন,আমি ফার্নিচারের দোকানটায় গেলাম,যেখান থেকে আলমারিটা কিনেছিলাম। দোকানি অনেক ভুংভাং বোঝালো, যার সার কথা, সে আলমারিটা ফেরত নিবে না।
দোকান থেকে চলে আসছি, তখন সেখানকার এক কর্মচারী আমাকে আড়ালে ডেকে ফিসফিস করে বললো, 'এই আলমারি কেউ রাখতে পারে না। দুদিন পর এই আলমারি আবার দোকানে ফিরে আসে।'
'কি সমস্যা এই আলমারির?'
'এই আলমারির যে প্রথম মালিক, সে তার বউকে মেরে কুঁচি কুঁচি করে কেটে এই আলমারিতে লুকায় রাখছিলো। এরপর থেকে এই আলমারিতে সমস্যা।'
বাসায় ফিরলাম। মীরাকে এসব কথা বলা যাবে না। ভীষণ ভয় পাবে মেয়েটা। তার চাইতে, দুয়েক দিনের মধ্যে আলমারিটা সরিয়ে ফেলতে হবে।
সে রাতে, আমরা অনেকক্ষণ উৎকণ্ঠায় বসে রইলাম। কিছুই হলো না। মীরা একটু বোকার মতো হেসে বললো, 'এই দুহাজার উনিশে এসে এসব কি কথা বিশ্বাস করছি আমরা চিন্তা করো।'
আমিও বোকার মতো হেসে বললাম, 'আসলেই। লজ্জাই লাগছে এখন।'
মীরা উঠে বাথরুমে গেলো। আমি ঘরে একা। এসময়ই, হঠাৎ আলমারির ভেতর থেকে আবার সেই ধুপধাপ শব্দ শুরু হলো। আজকে আরো জোরে হচ্ছে শব্দ, আর আলমারিটাও কাঁপছে প্রচন্ডভাবে। আজ আমাকে আটকানোর জন্য মীরা নেই, আমি দৌড়ে খুলে ফেললাম আলমারির দরজা। আর সঙ্গে সঙ্গে সভয়ে পিছিয়ে এলাম।
আলমারির ভেতরে মীরা। কে যেন প্রবল আক্রোশে তার শরীরটা দুমরে মুচড়ে ভরে রেখেছে আলমারির ভেতর।
বাথরুমে ততক্ষণে মরণ চিৎকার শুরু হয়েছে। যে চিৎকারটুকু আমরা গতরাতে শুনেছিলাম। বাথরুমের ভেতর থেকে কেউ বেরোতে চাচ্ছে বাইরে, দরজায় বাড়ি দিচ্ছে জোরে জোরে। দরজার নিচে চাপ চাপ রক্ত।
মীরার লাশটা হঠাৎ নড়ে উঠলো। তারপর, সে চোখ মেলে চাইলো আমার দিকে। ভীষণ দোমরানো মোচড়ানো লাশটা গড়াতে গড়াতে নেমে আসছে আলমারির ভেতর থেকে, আর তারপর ধেয়ে আসতে লাগলো আমার দিকে।
আমার সামনের সাদা অ্যাপ্রন পড়া লোকটা তার পাশের লোকটা বললো, 'এর সমস্যা কি?'
'মার্ডার কেস স্যার। বউকে মেরে আলমারিতে ভরে রেখেছিলো। এরপর থেকে সমস্যা, শক নিতে পারেনি।'
'শক নিতে পারেনি তো খুন করেছিরো কেন?'
'কি জানি স্যার। যতদূর জানি, পালিয়ে বিয়ে করেছিলো, বাস্তবতা তো বুঝে নাই। যতদিনে বুঝলো, বাস্তব বড় কঠিন, ততদিনে বেশ দেরি হয়ে গেছে। বউয়ের সাথে প্রতিরাতে ঝগড়া হতো। বউ কম বেতনের চাকরির কথা বলে খোটা দিতো। একরাতে, আর নিতে না পেরে খুন করে ফেলে বউকে।'
'আহারে। দুঃখজনক। নাও, ওরে একটু ঐ ঘরে নিয়ে যাই চলো। মাথায় বিদ্যুতের শক দেয়া লাগবে। পাগলামিটা বেড়েছে।'
আমাকে ওরা পাশের ঘরে নিয়ে গেল। পিছনে ফেলে আসা আমার ঘরের আলমারিতে পড়ে রইলো মীরার লাশটা। প্রতিরাতেই সেটা চেষ্টা করে আলমারি থেকে বেরিয়ে আসার। আমি সবাইকে বলি, কিন্তু কেউ বিশ্বাস করে না। সারারাত আমার কেটে যায় ভয়ে, আতঙ্কে, উৎকণ্ঠায়।
গল্প- আলমারি
লেখা- সোয়েব বাশার
তারিখ- ২৭/৮/২০২২