===

পর্দা নারী মর্যাদার এক নাম | The veil is a name of female dignity

 


[১] 
ইসলাম নারীকে কতোটা সম্মান দিয়েছে সেটা আল্লাহর ফরজ 'পর্দার বিধান' থেকেই সহজে স্পষ্ট।কেননা সেই জিনিসকেই তো পর্দার মোড়কে আবৃত করে রাখা হয় যে জিনিসের মর্যাদা বেশি,কদর বেশি।স্বর্ণ,হীরকের মতো মূল্যবান জিনিসের মর্যাদা বেশি বলেই যেমন তাদেরকে উন্মুক্ত রাখা হয় না ঠিক তেমনি নারীর মর্যাদা বেশি বলেই তাদেরকে উন্মুক্ত তথা বেপর্দায় থাকতে ইসলামে অনুমোদন নেই।এতে তাদের সম্মান নষ্ট হয়। আবার,মানুষের কাছে খোসা ছাড়া কলার যেমন কোনো সম্মান থাকে না,কদর থাকে না ঠিক তেমনি আল্লাহর নিকট একজন নারীর পর্দা ছাড়াও কোনো সম্মান থাকে না, কদর থাকে না।
 
মূলত,পর্দায় নারীর আসল সৌন্দর্য নিহিত।পর্দাই একজন নারীর প্রকৃত সম্মান ফুটিয়ে তুলে। একজন আত্নমর্যাদাবান নারী কখনো বেপর্দায় চলাফেরা করতে পারে না।একজন নারীর কতোটা আত্মসম্মানবোধ রয়েছে সেটা তার পর্দা থেকেই সহজে অনুমেয়।একজন নারীর পর্দাই বলে দেয় যে,তিনি কতোটা সম্ভ্রান্ত,তিনি কতোটা আত্মসম্মানবোধ নিয়ে চলছেন কিংবা তিনি নিজেকে কতোটা সম্মান করতে জানেন।যে নিজেকে সম্মান করে সে অন্যের সম্মান নিয়েও সচেতন থাকবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
 
আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন,হে নবী আপনি মু'মিন নারীদেরকে বলুন তারা যেনো (মাহরাম ব্যতীত) তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। [১]
 
আল্লাহ তা'য়ালা মু'মিন নারীদের আরও বলেছেন, তোমরা ঘরে অবস্থান করবে-পূর্বেকার জাহেলিয়াতের যমানার (নারীদের) মতো নিজেদের প্রদর্শনী করে বেড়াবে না। [২]
 
আল্লাহ তা'য়ালা নারীদেরকে মাহরাম ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে স্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন।আজকাল এমনও অনেক বোন আছেন যারা ঠিকই বোরকা হিজাব পরিধান করেন কিন্তু নিজের সৌন্দর্য ঢেকে রাখেন না।যার দরুণ পর্দার মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়।আল্লাহর নিষেধ অমান্য করা হয়।তারা এমনভাবে পর্দা করেন যে পর্দায় নিজের সৌন্দর্য ঢাকার পরিবর্তে আরও বেশি সৌন্দর্য প্রকাশ পায়।নিজেকে আরও বেশি আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করে থাকেন।
 
আচ্ছা বোন!বলুন তো,মানুষের সৌন্দর্যের প্রধান কেন্দ্রস্থল কোনটি?নিশ্চয়ই বলবেন চেহারা তথা মুখমন্ডল।এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি আপলোডের মাধ্যমে কিংবা সবার সামনে বের হয়ে উন্মুক্তভাবে চলাফেরা করার কারণে যদি আপনার মুখমন্ডলের মতো আসল সৌন্দর্যই প্রকাশ করা হয়ে যায় তবে আপনি সৌন্দর্য ঢাকলেন কোথায়?
 
একটু ভাবুন তো,আপনার বোরকা-হিজাব পরিধান করা সত্ত্বেও যদি আপনার মুখমন্ডলের মতো প্রকৃত সৌন্দর্য অনাবৃত থেকে যায় তবে আপনার পর্দা করার মূল্য থাকলো কোথায়?পর্দা মানেই তো আবৃত করে রাখা।নিজের আসল সৌন্দর্যই যদি আবৃত করে রাখা না হলো তবে কি আর পর্দা করা হলো?তাহলে কি পর্দার বিষয়টি আপনার কাছে অস্পষ্ট?বোরকা হিজাব পরিধান করেও আপনার প্রকৃত সৌন্দর্য প্রকাশ করে দেওয়ার মাধ্যমে কি পর্দার ব্যাপারে আপনার অস্পষ্টতা কিংবা উদাসীনতা ফুটে উঠে না?
 
[২]
রাসূল (সাঃ) বলেছেন,তিন ধরণের ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তা'য়ালা জান্নাত হারাম করেছেন।
১) যে মদ তৈরী করে।
২) যে মাতা-পিতার নাফরমানী করে এবং
৩) দাইয়্যূস। [৩]
 
উল্লেখ্য,ওই ব্যক্তিকে "দাইয়্যূস" বলে - যে তার স্ত্রী'কে ও পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে অশ্লীল কাজ,ব্যভিচারের সুযোগ করে দেয় এবং সকল শরীয়াহ বিরোধী কাজকে মেনে নেয়।এমনকি যদি এসব কাজে মৌন সম্মতিও থাকে তবুও দাইয়্যূসের অন্তর্ভুক্ত হবে।
এখন,আমাদের যেসব বোনেরা বেপর্দায় চলাফেরা করছেন এবং অনায়াসে নিজের ছবি ওয়্যাটস অ্যাপের স্ট্যাটাসসহ সোস্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে শরীয়াত বিরোধী কাজ করছেন,আপনারা কি আপনাদের বাবাকে দাইয়্যূস বানাতে চান? আপনারা কি চান আপনাদের জন্মদাতা পিতার কাঙ্ক্ষিত সুখময় স্থান জান্নাত হারাম হয়ে যাক?
নিজেকে প্রশ্ন করুন তো,আপনার বাবা যিনি নি
জে খেয়ে না খেয়ে আপনার চিকিৎসা, পড়াশোনাসহ সমস্ত ভরণপোষণ বহন করে আপনাকে এতো কষ্ট করে ছোটো থেকে বড়ো করে তুলেছেন,প্রতিনিয়ত আদর যত্ন করে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছেন সেই বাবাকে জান্নাতের অনুপযুক্ত করে তোলা কি বাবার প্রতি আপনার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ?মেয়ে হিসেবে তাতে কি কোনোভাবে বাবার প্রতি আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়?
 
দেখুন,আপনার বাবা হয়তো দায়্যূসের ব্যাপারে অবগত নন।তিনি হয়তো বিষয়টিকে ঐভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন না কিংবা আপনি কী করছেন না করছেন তা আপনার প্রতি সরল বিশ্বাসের কারণে মনিটরিং করছেন না।তাই বলে আপনি জেনেশুনে এমন কোনো কাজ করতে পারেন না যা আপনার বাবাকে দায়্যূসের কাতারে টেলে দেয়,যা আপনার বাবাকে জাহান্নামের মতো অতীব ভয়ঙ্কর জায়গার উপযুক্ত করে তুলে।
 
একইভাবে,যদি আপনি বিবাহিত হয়ে থাকেন তবে আপনি আপনার স্বামীকে যিনি সারাদিন বাইরে কষ্ট করে আয় রোজগার করে আপনার সমস্ত ভরণপোষণ চালিয়ে নিচ্ছেন,আপনি একটু অসুস্থ হলেই যিনি অস্থির হয়ে পড়েন,যিনি আপনার সুখে-দুঃখে ছায়ার মতো পাশে থাকেন,যাকে ঘিরে আপনার সমস্ত ভালোবাসা এমনকি যাকে নিয়ে আপনি জান্নাতে একত্রে থাকার স্বপ্ন বুনছেন সেই তাকে দায়্যূসে পরিণত করছেন না তো?
 
[৩]
কণ্ঠও যে পর্দার অন্তর্ভুক্ত কিংবা পর পুরুষের সাথে সুন্দর কন্ঠে কথা বলাতেও যে পর্দার মারাত্মক খেলাপ হয় সেটাও আমাদের অনেক বোনের অজানা।সৃষ্টিগতভাবেই,মহান রাব্বুল আলামিন নারীদের কন্ঠ আকর্ষণীয় করে রেখেছেন।ফলে কোনো গায়রে মাহরামের সাথে কথা বললে আপনি নারীর কন্ঠে আকৃষ্ট হয়ে যে কেউ-ই সহজে ফিতনায় পড়ে যেতে পারে।
এজন্য আল্লাহ তা'য়ালা আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়ে কণ্ঠের পর্দার ব্যাপারে বলেছেন,হে নবী পত্নীগণ!(যা সাধারণ নারীদের জন্যও প্রযোজ্য) তোমরা অন্য নারীদের মতো নও;যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো তবে পর পুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না,তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়ে পড়বে।আর তোমরা নিয়মমাফিক কথাবার্তা বলবে। [৩]
কিছু কিছু বোন আছেন যারা গায়রে মাহরামদেরকে খুব সুন্দর কন্ঠে 'ভাইয়া' 'ভাইয়া' বলে সম্বোধন করে এমন একটা অবস্থা করে ফেলেন যেনো হৃদয়ই কেঁড়ে নিচ্ছেন।অথচ নিজের আপন ভাইকেও এতো সুন্দর করে সম্বোধন করা হয় না।আপন ভাইকে এভাবে সম্বোধন করলে আরও বেশি আদর পাওয়া যেতো, ভাইয়ে-বোনে সম্পর্কও মজবুত হতো।এমন দৃশ্য দেখে আল্লাহও খুশি হতেন।কিন্তু আপসোস,আজকাল যেনো সবকিছু উল্টো ঘটছে।
তবে হ্যাঁ,বিশেষ কোনো প্রয়োজনে কোনো গায়রে মাহরামের সাথে যদি কথা বলতেই হয় তবে কন্ঠকে নমনীয় না করে একটু ভারী স্বরে সম্বোধন করতে হবে যেনো আপনার কন্ঠ দ্বারা বিপরীত লিঙ্গ আকৃষ্ট হওয়ার সুযোগ না থাকে।অন্যথায়,আল্লাহর ঐ আয়াত অনুযায়ী যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্দ হয়ে পড়বে,বাজে চিন্তা করে সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
আপনি যদি সত্যিকার অর্থে আল্লাহওয়ালী হতে চান, জান্নাতকে আপনার চিরস্থায়ী ঠিকানা হিসেবে পেতে চান তবে আপনাকে নিজের শরীরের পর্দার পাশাপাশি নিজের কন্ঠকেও পর্দার মধ্যে রাখতে হবে।তবেই আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবেন,তবেই আপনি রবের দৃষ্টিতে সফল হতে পারবেন।ইন শা আল্লাহ! 
 
রেফারেন্সঃ
[১] সূরা আন নূর,আয়াত নং : ৩১
[২] সূরা আল আহযাব,আয়াত নং : ৩৩
[৩] মুসনাদে আহমাদ,হাদীস নং: ৫৮৩৯
[৪] সূরা আল আহযাব,আয়াত নং : ৩২
#পর্দা

 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url