বিশ্বাসী সেই মেয়ে! Trusted Girl
-ঠিক আছে বাবা! তোমাকে ছোটবেলা থেকেই চিনি। তুমিও আমাদের চেনো। চেনাজানা কেউ প্রস্তাব দিলে ভরসা লাগে। কারণ তারা তো সব জেনেশুনেই অগ্রসর হবে। যদি কিছু মনে না করো, আরেকটা কথা বলবো!-জ্বি বলুন অবশ্যই! " বিয়েটা যদি করুণা বা দয়া দেখানোর জন্যে হয়, তখন সেটা আর বিয়ে থাকে না। রাজা-প্রজার সম্পর্ক হয়ে যায়। অবশ্য ব্যতিক্রমী মানুষও আছে।>বিয়ে হয়ে গেলো। মাকে ছেড়ে মেয়েটা স্বামীর ঘরে গিয়ে উঠলো। মায়ের সাথে প্রতিদিন তার দেখা হয়। কথা হয়। মাঝে মাত্র দুতিনটে বাড়ি। প্রথম কয়েকটা দিন দেখতে দেখতে কেটে গেলো। তারপর থেকে রঙ বদলাতে শুরু করলো। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে খোঁটা দিতে শুরু করলো; সে গরীব বলে। তাদের ছেলেকে আরো বড় ঘরে বিয়ে করাতে পারতো। আরো ভালো মেয়ে পেতো। ছেলের মাথায় কী ভীমরতি ধরলো,
সে কোথাকার ফকিরনি একটাকে এনে ঘরে তুলেছে। শুরুতে আড়ালে আবডালেই এসব চলতো। নববধূ না শোনার ভান করে থাকতো। আস্তে আস্তে আড় ভেঙে গেলো। কোনোরকম রাখঢাক ছাড়া তার সামনেই কথাবার্তা শুরু হয়ে গেলো। এটুকুতেই থেমে থাকলো না। ঘরের মানুষগুলো স্বামীর কানও ভাঙাতে শুরু করলো। মিছেমিছি অভিযোগ করতে শুরু করলো। প্রতিদিন শুনতে থাকলে কঠিন মিথ্যাকেও সত্য বলে মনে হয়ে থাকে। এখানেও তাই হল। স্বামী প্রথম প্রথম অবিশ্বাসভরে এসব উড়িয়ে দিলেও, পরের দিকে তার মনেও খটকা দেখা দিল। তাইতো! কোনো কারণ ছাড়া তো এত এত অভিযোগ উত্থাপিত হতে পারে না!">শুরু হলো স্বামীর পক্ষ থেকেও অভিযোগ। স্বামীর সমর্থন পেয়ে শ্বশুরবাড়ির অন্যরা এবার যেন লাই পেয়ে গেলো। লাগামছাড়া হয়ে গেলো তাদের নির্যাতন। মুখ দিয়ে যা তা বলার পাশাপাশি ঘরের সবকাজ তাকেই করতে দেয়া হল। একটু উনিশ-বিশ হলেই রক্ষে নেই। সারাদিন অমানুষিক খাটনী করার পরও যদি অভিযোগের মাত্রাটা একটু কমতো! মাঝেমাঝে মনে হয়, কাজ করাটাই তার দোষ! কারণ সে কাজ করলে, তারা রাগ ঝাড়ার সুযোগ পায় না! তখন পুঞ্জীভূত রাগ অন্যভাবে প্রকাশ করে।
দুপুরের দিকে হাতে তেমন কাজ থাকে না। পুরুষেরা যে যার কাজে থাকে। মহিলারা বিছানায় গড়াগড়ি দেয়। এই ফাঁকে মেয়েটা একছুটে মায়ের কাছে যায়। সমস্ত কষ্ট মায়ের কাছে খুলে বলে। বুকের ভার কিছুটা হলেও কমে। অসহায় বিধবা মা কীই-বা করতে পারেন। মেয়েকে বোবা কান্নামাখা স্বরে সান্ত্বনা দেন। এভাবেই দিন কেটে যায়। কষ্টের মাত্রাও বেড়ে চলে। যে স্বামী রানী করে ঘরে তুলেছিল, সে-ই এখন চাকরানী করে ঘরছাড়া করার চেষ্টা করছে। তাও মিথ্যে অভিযোগে! কিভাবে মানুষটা বদলে গেলো! মিছরি থেকে ধুতরা হয়ে গেলো! আশ্চর্য মায়ের বয়েস হয়েছে। মেয়ের কষ্ট আর নিজের খাওয়া-দাওয়ার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে, স্বাস্থ্য ভেঙে পড়লো। বিছানায় পড়ে গেলেন। মেয়ে দিনে একবার এসে মায়ের কাজ যতটুকু পারে করে দিয়ে যায়। তার নিজের স্বামীর ঘরে সুখ নেই, মাকে কিভাবে এ-দুর্দিনে সাহায্য করবে? মায়ের মনে ভীষণ কষ্ট, মেয়েটাকে সুখী দেখে যেতে পারলেন না। মেয়ের মনে কষ্ট, মা চলে গেলে কার কাছে মনের ভার লাঘব করবে
মা শীর্ণ দুর্বল হাতটা মেয়ের মাথায় বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন-মা রে! আমার আর বেশি দেরী নেই। তোর জন্যে কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে। আমি আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। জেনে শুনে কখনো স্বামীর অবাধ্য হইনি! পর্দা ভাঙিনি। নামায-রোজা কাযা করিনি। অজান্তে গুনাহ করে ফেললে, বারবার তাওবা করেছি! আমার জন্যে চিন্তা করিস না।-তুমি যে আমার শেষ আশ্রয় ছিলে! তুমি না থাকলে আমি কার কাছে যাবো!-ভুল বললি মা! আমি তোর শেষ আশ্রয় নই রে!,-আমি তুই সবারই শেষ আশ্রয় হলেন ‘আল্লাহ’! একমাত্র আশ্রয়ও বটে। আমি নেই তো কী হয়েছে! আল্লাহ আছেন। ছিলেন। থাকবেন।
তোর বাবা মারা যাওয়ার পরও আমি সাহস হারাইনি। হতোদ্যম হইনি। যৎসামান্য সঞ্চয় ছিল, ওটা দিয়েই কোনোরকমে দিন পার করে দিয়েছি। ভেবেছিলাম তুই সুখী হবি! মিলল না। তবে তোর সুখী হওয়ার সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি। মাত্র তো দুবছর গেলো। তোর সামনে এখনো দীর্ঘ জীবন পড়ে আছে। অবশ্য আল্লাহ যদি তোকে আগেই কাছে ডেকে নেন, সে ভিন্ন কথা!-তাই যেন হয় মা, তাই যেন হয়। তুমি বিনা আমি আর পৃথিবীতে থাকতে চাই না!পাগলী! এমন কথা বলে না। দুনিয়া কারো জন্যে থেমে থাকে না। যাবার আগে তোকে একটা কথা বলতে চাই! কী কথা মা! -আমি চলে গেলে, তুই নিঃসঙ্গ একাকী হয়ে পড়বি, এটা ঠিক নয়। আগেও তোকে কথাটা বলেছি! একটা কাজ করবি! আমি থাকতে যেমন প্রতিদিন এ-ঘরে আসতি, আমার মৃত্যুর পরও আসবি!
খালি ঘরে এসে কী করবো! মনটা আরো বেশি খারাপ হবে!-না হবে না। প্রথম প্রথম কষ্ট লাগলেও পরে ঠিক হয়ে যাবে। ঘরে এসে, আমার জায়নামাযটা বিছিয়ে, দুই রাকাত সালাত পড়ে, আল্লাহর কাছে সব কষ্টের কথা খুলে বলবি। ঠিক আমাকে যেভাবে বলতি, সেভাবে। চোখের পানি ফেলে। মনের সব দুঃখ একসাথ করেই বলবি। তাহলে দেখবি, আমার অনুপস্থিতির অভাব ধীরে ধীরে কেটে যাবে!
"মা চলে গেলেন। মেয়েকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে পরপারে পাড়ি জমালেন। এমন দুর্দিনেও মেয়েটা স্বামীকে পাশে পেলো না। কষ্টগুলো আগের মতোই আছে। সারাদিন হাঁড়ভাঙা খাটুনি। রাতে স্বামীর বকুনি। শুধু দুপুরবেলাটা একান্ত নিজের করে পাওয়া। মায়ের কথামতো আল্লাহর দরবারে ধর্না দিতে শুরু করেছে অসহায় বিপন্ন মেয়েটা। প্রথম দিন তেমন কিছু হয়নি। আসলে আল্লাহর কাছে এভাবে কখনো বলাই হয়নি। নিয়মিত নামাজ-কালাম হয়েছে। বাবা-মা ছোটবেলা থেকেই ইবাদতে অভ্যস্ত করে তুলেছিলেন। কিন্তু আল্লাহকেই শেষ ও একমাত্র আশ্রয় মনে করার মানসিকতাটা কেন যেন গড়ে ওঠেনি। মায়ের মৃত্যুশয্যার মিনতিভরা আখেরী উপদেশ! জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল।
মায়ের কাছেও যেসব কথা বলা যেতো না, মায়ের কষ্টের কথা ভেবে রেখেঢেকে বলতে হতো, আল্লাহর দরবারে সেসবের বালাই নেই। যা ইচ্ছে খুলে বলা যায়। আরও অবাক করা ব্যাপার হলো, মায়ের কাছে বলার সময় প্রতিদিন কান্না পেতো না। দুঃখ-কষ্টও একটা অভ্যেসে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু রবের কাছে হাত তুললেই বুকভেঙে কান্না আসে। আগের চেয়ে মনটা বেশি হালকা হয়ে যায়। একটা পাষাণ নেমে যায়।নেশার মতো হয়ে গেছে। মনটা আকুলি-বিকুলি করে। কখন দুপুর হবে। কখন আল্লাহর কাছে যাবে। এখন শ্বশুর বাড়ির যাতনাকে অসহ্য মনে হয় না। মনটাও হাসিখুশি থাকে।
ব্যাপারটা এ-বাড়ির কুটনীদের দৃষ্টি এড়াল না। কী ব্যাপার! মা-মরা মেয়ের মুখে এমন হাসি! তারা নিপীড়নের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিল। কাজ হলো না। এক মহিলা বললো:বউকে তার মায়ের বাড়ি থেকে আসার পরই বেশি উৎফুল্ল দেখা যায়! প্রতিদিন সাথে করে ভরা কলসি নিয়ে যায়, আসে খালি কলসি নিয়ে!ব্যাপার কি! ব্যাপারটা সুবিধের ঠেকছে না। তার জামাইকে বিষয়টা তাড়াতাড়ি জানাতে হবে! এমন দুশ্চরিত্রের মেয়ে ঘরের বধূ হয়ে থাকবে! মেনে নেয়া যায় না। আমাদের সোনার টুকরা সহজ সরল ছেলেটা বলেই সহ্য করে আছে! আজ একটা দফারফা করতেই হয়! আরো আগেই খেয়াল করা উচিত ছিল। মা-ও বোধ হয় এমন ছিল। তার কাছেই শিখেছে। কে জানে, মা বেঁচে থাকতেই এসব শুরু করেছিল। এখন আর নিজেকে বশ মানাতে পারছে না! আমাদের সরলতার সুযোগে এই করে বেড়াচ্ছে! দেশে কি দ্বীন-ধর্ম নেই!ছেলে এলো রাতে। তাকে একান্তে ডেকে ফিসফিস করে সব সালংকারে বলা হলো। ছেলের মাথায় আগুন ধরে গেলো। তাকে সমঝে-সুমঝিয়ে ঠান্ডা করা হলো।
ঠিক হলো, আগামী কাল আর অফিসে গিয়ে কাজ নেই। ঘর থেকে অফিসের নাম করে বের হয়ে, সোজা শ্বাশুড়ীর ঘরে গিয়ে লুকিয়ে থাকবে। একেবারে হাতেনাতে ধরা যা
দুপুর হলো। স্বামী অবাক হয়ে দেখলো, স্ত্রী ঝটফট গোসল সারলো। মায়ের রেখে যাওয়া ধবধবে শাদা পোশাকটা পড়লো। সালাতে দাঁড়িয়ে গেলো। তারপর দীর্ঘ মুনাজাতে ডুবে গেলো। একে একে নিজের কষ্টের কথাগুলো বললো। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না করেই, নিজের জীবনে সুখ-শান্তি কামনা করলো। স্বামীর জন্যে দু‘আ করলো। শ্বাশুড়ীর জন্যে দু‘আ করলো। এমন অপার্থিব দৃশ্য দেখে স্বামীর মনটা কেমন যেন হয়ে গেলো। অনুশোচনায়। লজ্জায়। বিবেকের দংশনে। -লামিয়া! তুমি কতোদিন ধরে এমন করে নামায পড়ছো? আম্মুর ইন্তেকালের পর থেকে!-কী আশ্চর্য! আমি এতটাই নির্দয়-নির্বোধ, একটুও টের পেলাম না! অন্ধ হয়ে অন্ধকারেই ডুবে ছিলাম! তোমার প্রতি যে যুলুম করেছি, তার প্রায়শ্চিত্ত কিভাবে হবে বলো!
কিছুই করতে হবে না! আগে মনে ভীষণ কষ্ট থাকলেও, আম্মু মারা যাওয়ার পর থেকে, কারো প্রতি কোনো রাগ নেই। অবাক করলে! মায়ের মৃত্যুর পর তোমার কষ্ট তো আরো বেশি হওয়ার কথা। আমরা সবাই মিলে যা করেছি! -তেমনি হওয়ার কথা ছিল। হয়নি তার কারণ, আম্মু মারা যাওয়ার আগের দিন আমাকে কাছে টেনে বসিয়ে কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন। বিশেষ করে দুটো শব্দ বলেছিলেন। আব্বুও ইন্তেকালের সময় আম্মুর অসহায় বিপন্ন অবস্থা দেখে, শব্দদুটো বলেছিলেন। সাথে ব্যাখ্যা শুনিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে গিয়েছিলেন। এজন্য আম্মু শত কষ্টেও নুয়ে পড়েন নি। আপনি যখন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন, সেটা ছিল আমাদের জন্যে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। আম্মুর দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছিল, এটা আব্বুর উপদেশ অনুযায়ী আমল করারই ফল! পরে অবশ্য কিছু সময়ের জন্যে, আমার কষ্ট দেখে, তার বিশ্বাসে কিছুটা চিড় ধরেছিল। ইন্তেকালের আগে আবার আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ফিরে পেয়েছিলেন।
শব্দ দুটো কী কী? -সেগুলো আসলে কুরআনের একটি আয়াতের অংশ! সূরা ‘আলাক’ মানে ইক্বরা-এর শেষ দুটি শব্দ। ‘উসজুদ’ ‘ইকতারিব’ অর্থাৎ ‘সিজদা করো। নিকটবর্তী হও’! নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবেমাত্র দ্বীনের দাওয়াত দেয়া আরম্ভ করেছেন। প্রকাশ্যে কাবাচত্বরে সালাত পড়তে শুরু করেছেন। আবু জাহলের এ-নিয়ে ভীষণ উষ্মা! সে সালাত বন্ধ করতে মাত্রাতিরিক্ত তৎপর হয়ে উঠলো! বাধা দিতে এলো। দম্ভভরে বললো:-তুমি সালাত পড়লে আমি পা দিয়ে তোমার গর্দন পিষে দেব (নাউযুবিল্লাহ)
আবু জাহলের এই দম্ভোক্তির প্রেক্ষিতেই আল্লাহ তাআলা সূরা আলাকের ছয় নাম্বার থেকে নিয়ে শেষ আয়াত পর্যন্ত নাযিল করেন। প্রথম পাঁচ আয়াত নাযিল হয়েছিল আরো আগে। সেই শুরুতে। হেরা গুহায়। নবীজি আবু জাহলের কথা শুনে তাকে উল্টো ধমক দিলেন। আবু জাহল তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলেছিল: -আমি মক্কায় একা নই। আমার একান্ত বৈঠকে প্রচুর লোক সমাগম হয়। আমি ডাকলেই তারা ছুটে আসবে। নরাধমের এহেন ঔদ্ধত্যের জবাবে আল্লাহ তাআলা পাল্টা হুমকি দিয়েছেন:
সুতরাং সে ডাকুক তার জলসা-সঙ্গীদের! আমিও ডাকব জাহান্নামের ফেরেশতাদের। হে নবী! আপনি তার আনুগত্য করবেন না। আপনি আমায় সিজদা করুন। তাহলে আপনি আমার আরো নিকটবর্তী হতে থাকবেন! নবীজি সিজদার মাধ্যমে সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে গিয়েছিলেন। আল্লাহর কাছাকাছি হয়েছেন।
আম্মুকেও দেখেছি দিনদিন আল্লাহর আরো কাছে, আরো কাছে যেতে। আমিও সে চেষ্টায় রত ছিলাম এবং আছি। যাতে সব কষ্ট ভুলে থাকা যায়। আর এটা প্রিয়নবীর আদর্শ। সুন্নাত। তার চেয়েও বড় কথা, সরাসরি আল্লাহর দেয়া অব্যর্থ সু-ব্যবস্থাপত্র।বিয়ে নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই। জানিনা কে কিভাবে নিবে। আমি বিয়ের ব্যাপারে খুব আগ্রহী ছিলাম, এখন ও আছি। যৌবনের তাড়নায় যন্ত্রনায় বিয়ের চিন্তা করেছিলাম। এবং খুব কঠিন ভাবে ।আমি ভেবেছিলাম, এই ডিপ্রেশন, শুন্যতা সব বউ এর মাধ্যমে পুরন হবে। এবং ফ্যান্টাসির এর সমুদ্রে পড়ে গেছিলাম। বাবা মা কে বলেই দিলাম। তারাও রাজি হল। কিন্তু বিয়েটাকে আমরা অবিবাহিত রা যেভাবে চিন্তা করি আসলেই কি তাই? আসলেই কি সকল হতাশা, শুন্যতার ওষুধ বউ?
আমি আমার বিবাহিত বন্ধুদের থেকে আমার বিয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিন্তু তারা দ্বীনদার ছিলনা। তারা আমাকে দেরিতে বিয়ে করতে বলল। আমি বললাম এখন তো আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছিনা। নারী সংগিনীর এক অভাব আমার ভিতর হাহাকার করছে। আমার ভিতর কত শত স্বপ্ন ভিড় করছে। তাদের সবার উত্তর ছিল এসব হাহাকার, আকাংখা, স্বপ্ন সর্বোচ্চ ৬ মাস-১ বছর থাকতে পারে, তারপর সব স্বাভাবিক। কিন্তু পাপ থেকে মুক্তির জন্য বিয়ে অবশ্যই ভাল। পাপ থেকে মুক্তির জন্য বিয়েটা অবশ্যই করতে পারিস। (আমরা অবশ্যই পাপ থেকে মুক্তির জন্য ই বিয়ে করবো)তারা বিয়েটাকে কিভাবে চিন্তা করি?? বিয়ের কথা চিন্তা করলেই আমাদের শরীরে এক ধরনের শিহরন তৈরি হয়, সুখের আবেসে ভেসে যায় কল্পনায়।কত শত খুনশুটি, সকালে স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরা, হাত ধরা, ঘুরতে যাওয়া, শারীরিক সম্পর্ক ইত্যাদি। এগুলো চিন্তা করলেই আমাদের ভিতর এক অন্যরকম শিহরণ তৈরি হয়। আর তখন ই বিয়ের প্রয়োজন অনুভব করি। মনে হয় বিয়ের পর এই রকম ই অনুভুতি হবে। এখন আমি চিন্তা করলাম, যদি বিয়ের পর এমন প্রশান্তি, শিহরন বজায় থাকে তাহলে আমার বন্ধুরা কেন বলল সব স্বাভাবিক, ডাল ভাত।এগুলো নাকি এখন তাদের কাছে স্পেশাল কিছু না। চিন্তার বিষয়। তাহলে চলুন দেখে আসি যে বিয়ের আগের অনুভুতি আর বিয়ের পরের অনুভুতি এক না। সম্পুর্ন আলাদা। রোমান্টিক সম্পর্ক মুলত তিনটি হরমোন এর মাধ্যে হয়
-ডোপামিন (আনন্দের হরমোন) টেস্টটেস্টরেন (সেক্স হরমোন) অক্সিটোসিন (ভালবাসা, মায়ার হরমোন)আমরা যখন কল্পনা করি তখন ডোপামিন আর টেস্টটেস্টরেন রিলিজ হয়। এখানে মুলত হিটলার হলো ডোপামিন। ব্রেন আমাদের বলে তোমার আনন্দ দরকার। তুমি পর্ন দেখো, হস্তমৈথুন কর, বউ নিয়ে ফ্যান্টাসি করো। তখন ব্রেন সিগ্নাল দেয়। আর তখন ই আমাদের পর্ন দেখতে, হস্তমৈথুন করতে, বউ নিয়ে ফ্যান্টাসি করতে ইচ্ছা করে। যে নিয়ন্ত্রন করতে পারে সে মন ডাইভার্ট করতে পারে। আর যে পারে না, সে তখন কন্ট্রোল করতে পারেনা। যখন আমরা এগুলো করি তখন ব্রেনে ডোপামিন এর বন্যা বইয়ে যায়। আর তখন অনেক মজা, আর শান্তি লাগে। তাহলে,ডোপামিন কাজ কি এগুলোই? ডোপামিন এর কাজ অন্য। এই হরমোন কে বলা হয় রিওয়ার্ড হরমোন।
১। আপনি বিরিয়ানী খাচ্ছেন, কোরান তেলয়াত করছেন,নামাজ পড়ছেন, বন্ধুর সাথে আড্ডা দিচ্ছেন, আইসক্রিম খাচ্ছেন, ভাল রেজাল্ট করলেন, চাকরী পেলেন এসব কাজে আপনার ব্রেন স্বাভাবিক ডোপামিন রিলিজ করবে, মানে আপনি স্বাভাবিক আনন্দ পাবেন। মনে করুন ব্রেন মাত্র ১-২ ফোটা ডোপামিন রিলিজ করল। খুব স্বাভাবিক। ২। আপনি গাজা খাচ্ছেন, হিরোইন খাচ্ছেন, পর্ন দেখছেন, ফ্যান্টাসি, কল্পনা করছেন তখন ব্রেন প্রচুর ডোপামিন রিলিজ করছে, ধরুন ৮-১০ ফোটা। মানে আপনি প্রচুর আনন্দ পাচ্ছেন। যা স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি। ঠিক আপনি যখন পর্ন দেখছেন, কোন রোমান্টিক নাটক দেখছেন, বউ নিয়ে কল্পনা করছেন, তখন ব্রেন প্রচুর ডোপামিন রিলিজ করছে আর আপনি প্রচুর আনন্দ পাচ্ছেন। nআর ভাবছেন বিয়ের পর ও হয়তো এমন হবে।এমন আনন্দ হবে। কিন্তু যখন বাস্তবে এগুলো করবেন তখন ব্রেন খুব স্বাভাবিক পরিমান ডোপামিন রিলিজ করবে। তখন ভাববেন, আরে আগে কি ভাবতাম আর এখন কি হচ্ছে?কল্পনায় বউকে জড়িয়ে ধরে যে মজা পেয়েছেন বাস্তবে দেখবেন আসলে এটা কল্পনার মত এত মজা না।
একদম স্বাভাবিক।এটা বাস্তবের মত মজা। তখন সব স্বাভাবিক। এখনকার মত এত শরিরে শিহরন দিবে না। ফ্যান্টাসি ও হবে না। একদম স্বাভাবিক, খুব ই স্বাভাবিক। তখন হতাশ হবেন। হয়তো কেউ কেউ ভাব্বেন কেন বিয়ে করলাম এখন। এগুলো তো কিছুই না। তাই আমাদের উচিত পাপ থেকে মুক্তির জন্য বিয়ে করা উচিত। বিয়ের এটা করবেন, ওটা করবেন। এসব ফ্যান্টাসি নিয়ে বিয়ের জন্য লাফিয়ে উঠলে হতাশ হবেন।
নেশা কেটে গেলে আপনিও কেটে যাবেন।
বিঃদ্র: এই পোস্ট টা আমার মত কিছু চিন্তার মানুষের জন্য। আমি আগে ভাবতাম বিয়ে কি না কি। কিন্তু সাইকোলজি পড়ে এই বিষয় গুলা দেখে আমার হুশ ফিরেছে। এখন আমার এত ফ্যান্টাসি নাই। এখন বিয়ের একটাই উদ্যেশ্য। আল্লাহর সন্তুষ্ট অর্জন, চরিত্র হেফাজত, পাপ থেকে মুক্তির জন্য।
বিয়ে করবেন নিজের মত একজন কে। যার সাথে আপনার মানষিকতা, চিন্তার মিল হয়।>চেহারা দেখতে যাবেন না। কারন সুন্দরী, পরি নিয়ে এসে দেখলেন আপনার মানষিকতার সাথে মিলছে না। তখন বউয়ের প্রতি আর ভালবাসা আসবেনা। তখন ডোপামিন আর কাজ করবেনা। তখন বউ পাশে থাকা সত্বেও কোন অনুভুতি থাকবে না।>ধরুন আপনি একজন দ্বীনদার মেয়ে বিয়ে করে নিয়ে আসলেন, কিন্তু আপনি গান বাজনা, নাচ খুব পছন্দ করেন, আপনি পুরাই উড়াধুড়া, কিন্তু আপনার বউ এমন না। তখন আপনার এবং আপনার স্ত্রীর ও সমস্যা। তাই আপনি ভাল হলে ভাল মেয়ে বিয়ে করুন।আর খারাপ হলে আপনার মত একজন কেই বিয়ে করুন।(মেয়েদের জন্য ও একই ব্যাপার)কল্পনায় সব কিছু সুন্দর, মধুময়, লালায়িত!সংসার এ স্বামী স্ত্রীর কথার; হালচাল
একজন পুরুষ সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে চিন্তা করেন কিন্ত একজন মহিলা চিন্তা করেন, কীভাবে সমস্যা নিয়ে কথা বলা যায়। মহিলারা সাধারণত সমাধানের কথা চিন্তা না করে সমস্যাটা নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসে। আসলে, কোনো অসুবিধার কথা বলতে না পারাই তাদের কাছে সমস্যা। এক বার মন খুলে সেই বিষয়ে কথা বলতে পারাই হল তাদের কাছে সমাধান।