===

এমন যেন না হয় তোমার জীবনে | Don't let that happen in your life

 

মেহমান এসেছে, তুমুল আড্ডা চলছে দেশের গণ জাগরণ নিয়ে, ওদিকে মাগরিবের সময় পার হয়ে যাচ্ছে, “আহ্‌ হা, মাগরিবের সময় দেখি শেষ হয়ে গেল। কিন্তু এখন উঠে গেলে ওরা আবার কি মনে করে। তার চেয়ে রাতে একবারে ঈশার সাথে পড়ে নিবো। আল্লাহ্‌ মাফ করুন।”
 
বিয়ের দাওয়াতে যাওয়ার আগে রঙবেরঙের সাজে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, ”মাথায় ঘোমটা দিলে কেমন খ্যাঁত মনে হচ্ছে। থাক, ঘোমটা ছাড়াই যাই, আত্মীয় স্বজনরা আবার কি সব বলাবলি করে। বান্ধবীরা দেখলে হাসা-হাসি করবে। ফুল হাতা ব্লাউজটাও একদম মানাচ্ছে না। দেখি হাফ হাতা পড়ি, স্মার্ট লাগবে। মাত্র এক রাতের ব্যাপার, কিছু হবে না, আল্লাহ্‌ মাফ করবেন।”
 
আমীর খানের ছবি লাগানো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটা লম্বা ফুল-হাতা শার্ট আর একটা স্লিম-ফিট টি-শার্ট হাতে নিয়ে, “এই লম্বা জামাটা আজকাল আর চলে না, লোকজন খ্যাঁত বলে। তারচেয়ে এই টি-শার্টটাতে আমাকে অনেক স্মার্ট দেখায়। কিন্তু এটা পড়ে সিজদা দিলে তো আবার পিছনটা বের হয়ে যায়। যাক্‌গে কিছু হবে না।
 
বন্ধুর নতুন গাড়ির পাশে নিজের পুরনো গাড়িটার দিকে তাকিয়ে, “নাহ্‌, এই ভাঙ্গা গাড়িটা ফেলে ব্যাংক থেকে গাড়ির লোণ নিয়ে এবার একটা নতুন গাড়ি কিনতেই হবে। এই গাড়ি নিয়ে বের হলে মানুষকে মুখ দেখাতে পারি না। প্রতিবেশীরা কেমন করে তাকায়, নিজেকে গরিব-গরিব মনে হয়। একটু সুদ দিলে কিছু হবে না। আল্লাহ্‌ নিশ্চয়ই আমার কষ্টের কথা বুঝবে।”
 
মাসের ভাড়া দিয়ে বাড়িওলার বাসা থেকে মুখ কালো করে ফেরত আসার পথে, “আর না, অনেক অপমান সহ্য করেছি, বন্ধু বান্ধবকে মুখ দেখাতে পারি না। মানুষকে বলতে হয় – ‘আমি ভাঁড়াটিয়া।’ এইবার ডিবিএইচের লোণটা নিয়ে একটা বাড়ি কিনবোই। পরে একসময় হজ্জ্ব করে আল্লাহ্‌র কাছে মাফ চেয়ে নিবো।”
 
রাস্তায় সার্জেন্টকে পাঁচশ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিতে দিতে, ”ছিছি, ঘুষ দেওয়াটা ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু না দিলে তো আবার গাড়ি নিয়ে যাবে। কি লজ্জার ব্যপার হবে যদি প্রতিবেশীরা জেনে ফেলে গাড়িটা দুই নম্বরি করে কেনা। থাক না, মাত্র পাঁচশ টাকা, আল্লাহ্‌ মাফ করেন।”
 
উপরের উদাহরণ গুলোতে যে ধরণের মানুষদের উপমা দেওয়া হল তারা এখনও এটা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি যে, তাদের থেকে বড় কোনো ক্ষমতার অধীনে তারা আছে, যিনি তাদের প্রত্যেকটা কথা, কাজ এবং চিন্তার হিসাব রাখছেন। ‘লোকে কি বলবে’ এই ভয়ে তারা সুদের লোণ নিয়ে বাড়ি-গাড়ি কিনবে যেন সমাজে মুখ দেখাতে পারে, ঘুষ দিয়ে প্রমোশন নিবে, চুরি করে পরীক্ষায় পাস করবে। এমনকি তারা অর্ধ নগ্ন হয়ে মাথা, চুল, গলা, ঘাড়, বুক-পিঠের উপরের অংশ, যতটুকু পারে হাত বের করে রাস্তা ঘাটে চলাফেরাও করবে। তারা ‘লোকে কি বলবে’-কে এতই ভয় পায় যে, তারা কখনও চিন্তা করে দেখে না যে, তারা কি ঘোষণা দিয়েছিল, যখন তারা বলেছিলঃ
 
লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ্‌ – আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কোনোই প্রভু/ঈশ্বর নেই।
 
আমরা যখন কালেমা পড়ে ঘোষণা দেই – লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ – তখন আমরা শপথ করি, ”আমার জীবনে আল্লাহ্‌র থেকে বড় আর কেউ নেই। আজ থেকে আমার প্রতিটা সিদ্ধান্ত এবং কাজে আল্লাহ থাকবেন সবার আগে, তারপরে অন্য কিছু। আমি অন্য কোনো কিছুকে আল্লাহ্‌র থেকে বেশি গুরুত্ব দিবো না।” কিন্তু তারপর যা ঘটে তা হচ্ছে অনেকটা এরকম..
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url