===

"বাটারফ্লাই ইফেক্ট" বলতে আসলে কী বোঝায়? | What does "butterfly effect" really mean?

 

"বাটারফ্লাই ইফেক্ট" বলতে আসলে কী বোঝায়?

তখন ১৯০৬ সাল। জার্মানে একজন চিত্রশিল্পীর গল্প এটা। সেই চিত্রশিল্পীর কাছে একদিন এক ইহুদি মেয়ে এসে হাজির। তার ছবি একে দিতে হবে। তো ছবি আকতে আকতে একসময় দেখাগেলো সেই জার্মান চিত্রশিল্পী ওই ইহুদি মেয়ের প্রেমে পড়ে যায়।যথারীতি সে তার প্রেম নিবেদন করে বসে মেয়েটির কাছে।মেয়েটির মৌন সম্মতি থাকলেও সেই ইহুদি মেয়ের পরিবার যথেষ্ট প্রভাবশালী হওয়ায় এই সম্পর্ক কোনভাবে মেনে নিবে না। বুঝো কান্ডো! যাই হোক এরপরেও তাদের ভালোবাসা দমে যায় নি। সেই চিত্রশিল্পীর একটা কুকুর ছিলো। সেই কুকুরের মাধ্যমে নিয়মিত চিঠি আদানপ্রদান হতো তাদের মাঝে। কিন্ত একদিন ওই মেয়ের পরিবার ওই কুকুরটাকেও মেরে ফেলে। ফলে বাধ্য হয়ে সেই চিত্রশিল্পী হাল ছেড়ে দেয়।

 

এরপর কোন একদিন কোন কারণে এক ইংরেজ সৈন্য সেই চিত্রশিল্পীর উপর বেজায় রেগে যায়। প্রচুর মারধোর করে তাকে। উপর থেকে মেরে ফেলার অর্ডার পেলেও কোন কারণে তার দয়া হয় এই চিত্রশিল্পীর উপর। সে তাকে আর মারে না। ছেড়ে দেয়।

এরপর আসে ২য় বিশ্বযুদ্ধ। জানেন সেই চিত্রশিল্পী কে ছিলো? এডলফ হিটলার। সেই বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের আদেশে অগনিত ইহুদির মৃত্যু হয়। মানবজাতির ইতিহাসে অন্যতম বড় হত্যাযজ্ঞ। মানুষ জাতির কালো অধ্যায়। সেই অধ্যায় এটা যা মানব জাতিকে কলঙ্কিত করেছে।

হিটলার যখন ফাইন আর্ট একাডেমিতে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন করলেন, তখন তাকে সেখান থেকে প্রত্যাখ্যান করা হলো। একবার নয়, দু দু'বার। তার এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন একাডেমির একজন ইহুদি অধ্যাপক।

এবার আসল কথায় আসি! কি হতো যদি সেই ইহুদি মেয়ের পরিবার থেকে তাদের সম্পর্ক মেনে নিতো? হিটলার সাহেব হয়তো সেই মেয়েকে নিয়ে জার্মানির কোন এক শহরে শান্তিতে বসবাস করতো। কিংবা যদি সেই একাডেমি যদি হিটলারের সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান না করতো তাহলে কি হতো? না হতো সে জার্মানের প্রধান না হতো সেই হত্যাযজ্ঞ। যদি হিটলারকে দ্বিতীয়বারেও একাডেমি গ্রহণ করতো, তাহলেও আজ হিটলার সবার কাছে একজন স্বৈরাচারী হিটলার হিসেবে পরিচিত না হয়ে একজন শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারতেন।

আবার সেই ইংরেজ সৈন্যের কথা ভাবুন। সে যদি ওইদিন দয়া না দেখাতো হিটলারের উপর, কি হতো? এডলফ হিটলার নামে কেউ থাকতো না। বিশ্বযুদ্ধ এত ভয়াবহ হতো না। এত ইহুদি ও মারা যেতো না।

এই একটা ছোট্ট ঘটনা চাইলেই পুরো দুনিয়ার ইতিহাসই বদলে দিতে পারতো। ভাবতে পারেন? এই সামান্য দুইটা ঘটনা হলে এই পৃথীবির ইতিহাস আজ অন্যরকম থাকতো। এখানেই আসে বাটারফ্লাই ইফেক্টের ধারণা। 

কোনো একটি স্থানের ছোট একটি পরিবর্তন পরবর্তীকালে অন্য কোনো জায়গার বড় ধরনের ঘটনার জন্য দায়ী হতে পারে। এটি পরিচিত বাটারফ্লাই ইফেক্ট নামে।

 


আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স’ এর ১৩৯ তম অধিবেশনে গণিতবিদ এবং আবহাওয়াবিদ এডওয়ার্ড লরেঞ্জ একটি বিশেষ প্রশ্নের উত্থাপন করেছিলেন। প্রশ্নটি ছিলো এমন যে, ব্রাজিলে যদি কোনো একটি প্রজাপতি তার ডানা ঝাপটায়, তবে সেই ডানা ঝাপটানোর সুবাদে টেক্সাসে টর্নেডো হতে পারে কি না?

প্রশ্নটি শুনে অনেকেই এডওয়ার্ড লরেঞ্জকে মানসিক বিকারগ্রস্ত সাব্যস্ত করতে পারেন। কারণ- প্রথমত, প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর কারণে আর যা-ই হোক, টর্নেডো হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, যদি টর্নেডো হয়েই থাকে, তবে ব্রাজিলে না হয়ে সেটা টেক্সাসে হবে কী করে! কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর আমরা যা জানি, তা নাও তো হতে পারে। প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর কারণে টর্নেডো হতেও পারে। আসলে এই অদ্ভুত তত্ত্বকেই ‘বাটারফ্লাই ইফেক্ট’ বা প্রজাপতি প্রভাব বলা হয়ে থাকে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url