প্রেমের বিয়ে বা কোর্ট ম্যারেজঃ- প্রেমের বিয়ে কি জায়েয? Love marriage or court marriage: - Is love marriage permissible?
প্রেমের বিয়ে বা কোর্ট ম্যারেজঃ- প্রেমের বিয়ে কি জায়েয?
বন্ধুরা,
আল্লাহ পাক একটি মাত্র সেক্স তৈয়ার করেন নাই বরং তিনি এক মহা পরিকল্পনাকে সামনে রেখে নারী পুরুষ উভয় সেক্সই তৈয়ার করেছেন। সে পরিকল্পনাটি কি? সে পরিকল্পনাটি হলো,ফ্যামেলি গ্রাউন্ড,বংশীয় ধারা, আত্মীয়তার সম্পর্ক ও বিশ্ব পরিবার গড়ে তুলা।
আল্লাহ পাক যদি নারী পুরুষ উভয় সেক্স তৈয়ার না করতেন, আজকের এই বিশ্ব সভ্যতা গড়ে উঠত না ঠিক না বন্ধুরা?
আল্লাহ পাক মানুষকে সম্মানিত করে সৃষ্টি করেছেন বিধায়, তিনি শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট বিধিমালা বেঁধে দিয়েছেন। সে বিধিমালাটি কি? সে বিধিমালাটি হচ্ছে বিধান অনুযায়ী বিয়ে করা।
এই বৈবাহিক সম্পর্কের উপরই নির্ভর করবে, পারিবারিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা। মানুষ অন্যান্য প্রাণীর মতো নহে যে, যেনতেন ভাবে যৌন সম্পর্ক গড়ে তুলবে বা যৌন ক্ষুধা নিবারণ করবে বরং তাকে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় যৌন ক্ষুধা নিবারণ করতে হবে।
যৌন চাহিদা পূরণ করা মানুষের মৌলিক অধিকার। এই মৌলিক অধিকারকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা কারো নেই। এই জন্যই নিয়মতান্ত্রিক ভাবে যৌন চাহিদা পূরণ করার মানসে যুগে যুগে বিবাহ প্রথাটি চলে এসেছে। এ বিবাহ ব্যবস্থা যতোই মযবুত হবে,ততই পারিবারিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।
আর এ ব্যবস্থা যতই শিথিল হবে,ততই পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়তে থাকবে বরং বলা যায় পারিবারিক স্ট্রাকচারটি একেবারেই ভেঙে পড়বে।
মানুষের এ যৌন চাহিদার মৌলিকতা সামনে রেখে কোরআন সুন্নাহ উপযুক্ত পাত্র পাত্রীর বিয়ের ব্যবস্থা করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,হে যুব সমাজ তোমাদের মাঝে যাদের সামর্থ্য আছে, তাদের বিয়ে করা কর্তব্য। কারণ এতে অবাধে চলাফেরা বন্ধ, সতীত্বের হেফাজত ও সেফটি বাল্ব ও স্বাস্থ্যের সুরক্ষা হবে।
চারটি জিনিস নবী রাসুলদের সুন্নাত। এক. হায়া- লজ্জা। দুই. সুগন্ধি ব্যবহার করা। তিন. বিবাহ করা।ও চার. মেসওয়াক করা।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিয়ে করা আমার সুন্নাত, যে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিবাহ না করবে,সে আমার দলভুক্ত নহে।
বন্ধুরা, দ্বীনি কায়দায় বিবাহের ক্ষেত্রে কতগুলো জিনিস অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে। এক. পাত্র পাত্রীর পছন্দ ও অপছন্দের ব্যপারটি। পাত্র পাত্রীর অমতে যদি কোথাও বিয়ে হয়, তাহলে পাত্র পাত্রী বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাবার অধিকার রাখে।
কারণ বিবাহ এক দিনের ব্যাপার নয় বরং তাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ঘর সংসার করতে হবে। যদি এক জন আরেক জনের প্রতি শ্রদ্ধা ও রুচিবোধ না থাকে, তাহলে দম্পতি সুখের না হয়ে তিক্ত হয়ে উঠবে আর ইসলাম চায় না একটি দম্পতি তিক্ত হয়ে উঠুক।
এই জন্যই পাত্র পাত্রীর পছন্দের ক্ষেত্রে উভয়েরই সম্মতির দরকার রয়েছে।
আবার অভিভাবক ছাড়া ইসলামে বিয়ে জায়েজ নহে। কারণ এতে পরিবার প্রধানের যেমন মানহানির সম্ভবনা রয়েছে, ঠিক তেমনি আবেগের বশবতী হয়ে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিলে পাত্র পাত্রীর ভবিষ্যত জীবন সয়েল তথা মাটি হওয়ার ও সম্ভাবনা রয়েছে।
সাধারণত উড়তি বয়সের ছেলে মেয়ে আবেগী ও উন্মাদনাময় হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত অনেকাংশেই ভুল হয়ে থাকে।
বন্ধুরা, আপনারা যদি লক্ষ্য করেন, তাহলে আপনাদের চোখের সামনেই হাজার হাজার নজির রয়েছে যে, প্রেমের বিয়ে শতকরা পঁচানব্বইটা টিকে না। শরীয়ত ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যত জীবনের উজ্জ্বলের আশায় প্রেমের বিয়েকে নাজায়েজ ঘোষণা করেছেন।
এ ক্ষেত্রে পাত্র পাত্রী ও অভিভাবকদের মতের সমন্বয় সাধন করতে হবে। বন্ধুরা, আমাদের দেশের ফ্যামিলি স্ট্রাকচার অনেকটা পাশ্চাত্য ধাঁচের হয়ে গেছে এবং ফিরিঙ্গী স্টাইলের হওয়ার কারণে আমাদের পারিবারিক কাঠামো অনেকটা শিথিল হতে চলেছে।
শরয়ী আইন কানুন চালু না থাকায়, বিয়ের ক্ষেত্রে ইচ্ছে থাকলে ও কোরআন সুন্নাহর আলোকে আমরা চলতে পারছিনা। যেমন ধরুন বাংলাদেশের সাংবিধানিক আইনে মেয়ে আঠার বছরের আগে ও ছেলে বাইশ আগে বিয়ে করা দন্ডনীয় অপরাধ অথচ এই আইনটি কোরআন সুন্নাহর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের পারিবারিক আইন কানুনের প্রয়োগ ঘটাতে হলে কোরআনের অনুশাসন প্রয়োজন। আসুন কোরআনের শাসনতন্ত্র ক্বায়েমের স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রচেষ্টা চালায়! আল্লাহ তৌফিক দান করুন আমীন।
বিস্তারিত তত্ত্ব জানার জন্য চোখ রাখুন সূরা নিসার-১ নং আয়াত। বুখারী বিবাহ অধ্যায়ের-৫০৬৫,৫১২৭,৫১৩৬. তিরমিযীর বিবাহ অধ্যায়-১০৮০,১১০১,১১০২, আবু দাউদ-২০৪২,২০৭৯,২০৮৮,২০৯২, ইবনে মাযাহ- ১৮৮১,১৮৭৫,১৮৭৭,১৮৭৯, মিশকাত-৩৮২ ও আল- রাদ্দুআলা আল-কাত্তানী পৃষ্ঠা নং ১২।
হাযা-মা ইনদি ওয়াল ইলমু ইনদাল্লাহ। আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া ইলাইহি উনিব।